রাবি প্রতিনিধি : যৌন হয়রানির অভিযোগে চাকরিচ্যুতির প্রতিবাদ এবং চাকরি পূর্নবহালের দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রের সাবেক উপপ্রধান চিকিৎসক ডা. রাজু আহমেদ। বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পেছনে এ সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। এ সময় তিনি যৌন হয়রানির অভিযোগকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও রসায়ন প্রকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাবিনা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে 'সন্ত্রাসী' দ্বারা বর্বরোচিত হামলা ও মিথ্যা মামলা দায়েরের অভিযোগ তুলেন ডা. রাজু।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য ডা. রাজু আহমেদ বলেন, গত ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর আনুমানিক বিকাল সাড়ে ৬টায় সহযোগী অধ্যাপক সাবিনা ইয়াসমিন আমাকে ফোন করে চেম্বারে আসার এ্যাপয়েনমেন্ট চান। আমি তাকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার সময় আসতে বলি। তখন তিনি উক্ত সময়ে না এসে আবারো রাত ৯.৫৩ মিনিটের সময় আমাকে ফোন করে বলেন আমি আপনার চেম্বারে আসতে চাচ্ছি। চেম্বার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমি তাকে আসতে নিষেধ করি। তিনি আমার নিষেধ উপেক্ষা করে চাপ প্রয়োগ করেন। আমার চেম্বারে এসে প্রয়োজনে অপেক্ষা করতে চান তিনি। তার মেয়ের গুরুতর দাঁতে ব্যাথা হচ্ছে শুনে আমি সম্পূর্ণ মানবিক কারনে আমার সহকারীকে চেম্বার দ্বিতীয়বার খুলে সাবিনা ইয়াসমিন ও তার মেয়েকে আসতে বলি এবং উনাদেরকে চেম্বারে অপেক্ষা করতে বলি। রাত আনুমানিক ১০টার দিকে আমি পুনরায় চেম্বারে প্রবেশ করলে সাবিনা ইয়াসমিন ও তার মেয়ে আমার সঙ্গে চিকিৎসার কক্ষে প্রবেশ করেন।
এসময় লিখিত বক্তব্যে সাবিনা ইয়াসমিনের হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ১০-১৫ মিনিট চিকিৎসা প্রদান শেষে আমার সহকারীকে ফি নেওয়ার জন্য বলি। অধ্যাপক সাবিনা ইয়াসমিন আমার সহকারীর সঙ্গে ফি চাওয়া নিয়ে অত্যন্ত দূর্ব্যবহার শুরু করেন এবং অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। আমি উক্ত ব্যবহারের প্রতিবাদ করলে তিনি আমার সাথেও দূর্ব্যবহার শুরু করেন। একপর্যায়ে আমার দিকে মারতে তেড়ে আসেন এবং টেবিলে রাখা ভারী পেপারওয়েট দিয়ে আমার মাথায় পরপর দুবার সজোরে আঘাত করেন।ওনার পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী কয়েকজন দুর্বৃত্তকে চেম্বারে প্রবেশ করতে বলেন এবং আমাকে মারতে বলেন। তখন দুর্বৃত্তরা আমার বুকে সজোরে লাথি মারে ও পা দিয়ে খুচতে থাকে এবং চেম্বার ভেঙ্গে তছনছ করে। এতে আনুমানিক দেড় লাখ টাকার ক্ষতি করেন। সাবিনা ইয়াসমিন তখন আমাকে মেরে ফেলতে দুর্বৃত্তদের হুকুম দেন। তখন একজন দুর্বৃত্ত আমার গলা চেপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করতে উদ্ধত হয়। আর্তচিৎকার শুনে আমার সহকারী, আমেনা ক্লিনিকে কর্মরত নার্স আখি খাতুন ও সুমি খাতুন সহ আশেপাশের লোকজন এগিয়ে এসে আমাকে উক্ত হামলাকারিদের নিকট থেকে উদ্ধার করেন।
মামলা বিষয়ে ডা. রাজু বলেন, গেল বছরের ৩১ অক্টোবর বোয়ালিয়া থানায় বাদী হয়ে আমার বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় আদালতের নির্দেশে আমি স্থায়ী জামিনে আছি। আমি শারিরীকভাবে কিছুটা সুস্থবোধ করায় গত বছরের ১৩ নভেম্বর আদালতে নিজে বাদী হয়ে সাবিনা ইয়াসমিনসহ তিনজনকে আসামি করে কোর্টে একটি মামলা দায়ের করি।
বাহিরের ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে টেনে আনার প্রসঙ্গে তুলে ধরে তিনি বলেন, সাবিনা ইয়াসমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন এবং মামলাটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট ভুলভাবে উপস্থাপন করেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মামলার কারনে কোন কারণ দর্শানোর নোটিশ ছাড়াই গত বছরের ৫ নভেম্বর আমাকে চাকরি হতে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেন। একপর্যায়ে সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে আমাকে চাকুরীচ্যুত করেন। চাকুরীচ্যুতির কারনে আমি মহামান্য হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করি। রিট মামলায় মহামান্য হাইকোর্ট আমার চাকুরীচ্যুতির আদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন।
এসময় ডা. রাজু তাঁর চাকরি পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে বলেন, আমার নামে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে অভিযোগ এনে আমার নামে মিথ্যা মামলা এবং আমাকে চাকরিহারা করার জন্য সাবিনা ইয়াসমিনের উপযুক্ত বিচারের জোর দাবী জানাচ্ছি। আমাকে চাকুরীতে পূর্নবহালের জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট বিনীত প্রার্থনা জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে অভিযুক্ত অধ্যাপক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, 'নিজেকে রক্ষা করার জন্য তিনি এসব করে যাচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে ২টি তদন্ত কমিটি করা হয়েছিল। তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে তাকে চাকুরীচ্যুত করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিতে যারা ছিল তারা আমার কোন লোক ছিল না। তার অপরাধ প্রমাণ হওয়ার কারণে তাকে চাকুরীচ্যুত করা হয়েছে। তিনি যদি এসব দাবি ভিত্তিহীন দাবি করেন তাহলে প্রমান দিক।'
হাইকোর্টের পিটিশনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ - উপাচার্য অধ্যাপক মাঈন উদ্দিন বলেন, এ বিষয়ে আমি এখনো অবগত না। তবে সে যদি আবেদন করে থাকে তাহলে লিগ্যাল সেল সেটার ব্যবস্থা নিবে। আর বরখাস্তকৃত ডা. রাজুকে চাকুরিতে পুনর্বহাল করা কঠিন। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৩০ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিনের অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া কিশোরীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠে ডা. রাজুর বিরুদ্ধে। পরে একই বছরের ৫ নভেম্বর তাঁকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ বছরের ৩ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩১ তম সিন্ডিকেট সভায় তাকে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়।