স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ নেতা ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যানের হিমাগারে এক তরুণ, নারী ও কিশোরীকে অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে মঙ্গলবার সকালে পবার বায়া এলাকায় অবস্থিত সরকার কোল্ড স্টোরেজের অফিসকক্ষে আটকে রেখে তাদের নির্যাতন করা হয়। এ ঘটনার পর ক্ষুব্ধ জনতা অফিস কক্ষটিতে ভাঙচুর চালিয়েছেন।
এ ঘটনায় এলাকাবাসী আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী সরকারের ছেলে আহসান উদ্দিন সরকার জিকো (৪৫), মেয়ে আখি (৩৫) ও হাবিবাকে (৪০) অফিসকক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় এয়ারপোর্ট থানা-পুলিশ তাদের আটক করে। এর আগে পুলিশ নির্যাতনের শিকার তিনজনকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠায়।
জানা গেছে, ভুক্তভোগীরা পবা উপজেলার কুঠিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। নির্যাতনের শিকার তরুণ (২৭) রাজশাহীর একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী। আর কিশোরী (১৩) ও নারী (৩০) তার খালাতো বোন। তাদের নির্যাতনের ঘটনায় ওই তরুণের ভাই বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এজাহারে বলা হয়েছে, অফিসকক্ষে ডেকে নিয়ে তিনজনকে লাঠি, বাঁশ, হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হয়। একপর্যায়ে শরীরে সেফটিপিন ফুটিয়ে নির্যাতন করা হয়।
নির্যাতনের শিকার ওই নারী জানান, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকারের সঙ্গে তাদের পরিবারের সুসম্পর্ক ছিল। এ বিষয়টি তার ছেলে-মেয়েরা ভালোভাবে নিতেন না। তাদের সন্দেহ, মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে তার অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। সন্দেহ থেকেই মঙ্গলবার সকালে তাকে ফোন করে হিমাগারে ডাকা হয়। তখন তিনি তার খালাতো ভাই ও ছোট বোনকে সঙ্গে নিয়ে আসেন। এখানে আসার পর মোহাম্মদ আলীর ছেলে ও মেয়েরা তাদের ধাক্কা দিতে দিতে অফিস কক্ষের ভেতরে নিয়ে যান। এরপর কর্মচারীদের সহায়তায় তাদের নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের সময় দরজা বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। তাদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছিল।
পরে স্থানীয় লোকজন চিৎকার শুনতে পেয়ে এগিয়ে যান। তারা অফিসের দরজা খুলতে বললেও খোলা হচ্ছিল না। একপর্যায়ে দরজা খোলা হয়। পরে পুলিশ এলে তাদের মোবাইলগুলো ফেরত দেওয়া হয়। নির্যাতনের শিকার অপর কিশোরী জানায়, মোহাম্মদ আলী সরকারের দুই মেয়ে তার দুই বোনের শরীরে সেফটিপিন ফুটিয়ে নির্যাতন করেছে।
স্থানীয়রা জানান, বেলা ১১টা থেকে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা হিমাগারের ভেতর মোহাম্মদ আলী সরকারের ছেলে-মেয়েদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। তারা তাদের গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার দাবি জানাতে থাকেন। তবে বের করলেই হামলার শঙ্কায় পুলিশ তাদের নিয়ে যাচ্ছিল না। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে দুপুর ২টার দিকে স্থানীয়রা অফিসকক্ষের সিসি ক্যামেরা ও কাঁচের জানালাগুলো ভেঙে ফেলেন। পরে সেনাবাহিনীর সহায়তা নেওয়া হয়। তারা আসার পর তিনজনকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
নগরীর এয়ারপোর্ট থানার ওসি ফারুক হোসেন জানান, এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতার অভিযুক্ত তিন ছেলে-মেয়ের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তিনজনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।