
স্টাফ রিপোর্টার : পুরোদস্তর শীত চলছে। ভোরের কুয়াশা ভেদ করে সূর্য্য উঁকি দেওয়ার আগেই কুয়াশাচ্ছন্ন প্রকৃতিতে গাছিরা বেরিয়ে পড়েন খেজুরের রস সংগ্রহে। রস সংগ্রহের পর তা ভালো ভাবে ছেঁকে নিয়ে তাওয়ায় জ্বাল দিতে থাকেন। দুই থেকে তিন ঘন্টা চলে এই প্রক্রিয়া। একসময় খয়েরি বর্ণের ঝোলা গুড়ে রূপ নেয় রস। এরপর বিশেষ আকারের পাত্রে ঢেলে দিলে শুকানোর পর হয়ে যায় পাটালি গুড়। এই পাটালি গুড় দেখতে যেমন চমৎকার তেমনি খেতেও সুস্বাদু। এটা অর্গানিক ও সনাতনি পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে তৈরি গুড় ভেজালমুক্ত। এমন গুড়ের চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে।
কোন ধরনের কেমিক্যাল ছাড়াই অর্গানিকভাবে গুড় তৈরি করার পর সারাদেশে বাজারজাত করে স্বাবলম্বী হয়েছেন রাজশাহীর তিন যুবক। সম্পর্কে এই তিন যুবক আপন ভাই। শীত মৌসুমকে কেন্দ্র করে তাদের এই কর্মযজ্ঞ ব্যাপক সাড়া ফেলেছে মানুষের মধ্যে।
বেশ কয়েক বছর ধরে অনলাইনে অর্গানিক খেজুর গুড় বাজারজাতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন রাজশাহীর গোদাগাড়ীর তিন সহোদর। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অর্ডার নিয়ে অর্গানিক খেজুর গুড় পৌঁছে দেয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করে ইতিমধ্যে আস্থা অর্জন করেছেন তারা। গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী অর্গানিক খেজুর গুড় কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠিয়ে দিচ্ছেন দেশের নানা প্রান্তে। আর ক্যাশ অন ডেলিভারির সুযোগ থাকায় বিক্রিত গুড়ের টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পেয়ে যাচ্ছেন ঘরে বসেই।
অর্গানিক খেজুর গুড় বাজারজাত প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়া তিন সহোদর হলেন রিপন আলী (২৬), আব্দুল বারেক (২৮) ও হাফেজ রমজান আলী। এই তিনভাই রাজশাহীর গোদাগাড়ী এলাকার বাসিন্দা হলেও দুর্গাপুর অঞ্চল থেকে অর্গানিক খেজুর গুড় বাজারজাত প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছেন।
তারা যৌথভাবে গড়ে তুলেছেন চারটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে রয়েছে উত্তরবঙ্গ বাটিক হাউস, ফ্ল্যাশ মার্ট, ফ্ল্যাশ আইটি প্রো ও অর্গানিক লাইফ। উত্তরবঙ্গ বাটিক হাউসে চলে বাটিক এবং কটনের সকল ধরনের থ্রি-পিচ তৈরি ও পাইকারি বিক্রয়। ই-কমার্স সাইট ফ্ল্যাশ মার্টের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের দেশীয় ঐতিহ্যবাহী ও বৈধ পণ্য খুচরা ও পাইকারী বিক্রি করা হয়। ফ্ল্যাশ আইটি প্রোগ্রামের মাধ্যমে ডিজিটাল মার্কেটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং, ওয়েব ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট এবং ডিজিটাল বিজনেস ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করা হয়। এছাড়াও অর্গানিক লাইফের মাধ্যমে রাজশাহী অঞ্চলের সুস্বাদু খেজুরের গুড়সহ বিভিন্ন অর্গানিক পণ্য সবার কাছে পৌঁছে দিতে কাজ করছেন তারা।
এবার শীত মৌসুমে এই তিনভাই শুধু অর্গানিক খেজুর গুড় বিক্রি করে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা আয় করবেন বলেও তারা আশাবাদী।
অর্গানিক লাইফের নিয়মিত গ্রাহক শাকিল খান জানান, প্রথমে এক বন্ধুর মাধ্যমে খোঁজ পাই অর্গানিক লাইফ নামের এই প্রতিষ্ঠানের। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের পেইজ খুঁজে বের করে ইনবক্সে কিছু গুড়ের অর্ডার করি। সময়মতো গুড় ডেলিভারি দিয়েছেন তারা। তাদের গুড় অনেক সুস্বাদু। তাছাড়া দেখতেও চমৎকার। তিনি জানান, এখন অনেকেই অর্গানিক লাইফের পেইজে গিয়ে অর্গানিক খেজুর গুড় কিনছেন।
তরুণ উদ্যোক্তা রিপন আলী বলেন, আমরা যেহেতু রাজশাহীর বাসিন্দা সেক্ষেত্রে আমাদের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের আমরা এই গুড় উপহার হিসেবে দিতাম। পরের বছর তারা আগ্রহ করে চেয়ে বসে। সেই থেকে শুরু হয় আমাদের শীতকালীন খেজুর গুড়ের ব্যবসা। আমরা খেজুর গুড় তৈরির প্রক্রিয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিজেরাই করে থাকি। এই গুড়ে কোনো ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়না। ফলে এই গুড় খেতে অনেক সুস্বাদু হয়ে থাকে।
বাজার এখন ভেজাল ও নিম্নমানের গুড়ে সয়লাব। এই প্রতিযোগিতায় অর্গানিক উপায়ে খেজুর গুড় তৈরি করে বাজারজাত করাটা অনেক চ্যালেঞ্জের। আমরা সেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী খেজুর গুড় পৌঁছে দিচ্ছি।
পেশায় ডিপ্লোমা প্রকৌশলী হলেও আব্দুল বারেক ভাইদের সাথে অর্গানিক খেজুর গুড় তৈরীর এই প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত হয়েছেন। মানুষের চাহিদার বিষয়টি বিবেচনা করেই তিনি অর্গানিক খেজুর গুড় তৈরি ও বাজারজাত নিয়ে কাজ শুরু করেন। কয়েক বছর ধরে অনলাইনে খেজুর গুড় বিক্রি করছেন তারা। এখন অনেকটাই সফল উদ্যোক্তা হিসেবে যশ ও খ্যাতি কুড়িয়েছেন তারা।