স্টাফ রিপোর্টার : দেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ঐতিহ্য, শিল্প ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্য তুলে ধরতে রাজশাহীতে শুরু হয়েছে বিভাগীয় পর্যায়ের ‘সংস্কৃতি বিনিময় কর্মসূচি’। মঙ্গলবার বিকেলে রাজশাহী বিভাগীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমি অডিটোরিয়ামে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। দুই দিনব্যাপী এই কর্মসূচি শেষ হবে আট বুধবার (৮ অক্টোবর)।
অনুষ্ঠানের শুরুতে রাজশাহী জেলা ও নেত্রকোণার বিরিশিরি এলাকার বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক দল অংশ নেয়। তারা নিজেদের গান, নাচ, বাদ্যযন্ত্র, পোশাক ও লোকজ ঐতিহ্যের প্রদর্শনের মাধ্যমে সংস্কৃতির বহুমাত্রিকতা ও ঐক্যের বার্তা ছড়িয়ে দেন। উদ্বোধনের পর সাঁওতাল, ওরাও, মাহলী, মুণ্ডা, খাসি ও হাজং সম্প্রদায়ের শিল্পীদের পরিবেশনা দর্শকদের মুগ্ধ করে।
রাজশাহী বিভাগীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমির পরিচালক হরেন্দ্র নাথ সিংয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক ও ছাত্র উপদেষ্টা ড. মো. আমিরুল ইসলাম, একাডেমির নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও দৈনিক সোনারদেশ পত্রিকার সম্পাদক আকবারুল হাসান মিল্লাত, নির্বাহী সদস্য মোসা. মনোয়ারা পারভীন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি গণেশ মাঝি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কালচারাল একাডেমি বিরিশিরির নির্বাহী সদস্য যুগল কিশোর কোচ ও পরিচালক পরাগ রিছিল। এছাড়া বিরিশিরির ভারপ্রাপ্ত কালচারাল অফিসার মালা মার্থা আরেং, সাংস্কৃতিক কর্মী পল্ব চক্রবর্তী ও সরোজ মোস্তফা অংশ নেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ও রাজশাহী বিভাগীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমির পরিচালক হরেন্দ্র নাথ সিং বলেন, ‘বাংলাদেশের সংস্কৃতি হাজার বছরের ঐতিহ্যে গঠিত। বাঙালি ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃতি একে অপরের পরিপূরক। এই বিনিময় কর্মসূচির মাধ্যমে পারস্পরিক বন্ধন ও বোঝাপড়া আরও গভীর হবে।
একাডেমির নির্বাহী সদস্য আকবারুল হাসান মিল্লাত বলেন, সংস্কৃতি কেবল বিনোদনের মাধ্যম নয়, এটি জাতির আত্মার প্রতিচ্ছবি। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃতি আমাদের জাতীয় সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করছে। তাদের ঐতিহ্য রক্ষায় গণমাধ্যম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজের সর্বস্তরে সচেতনতা জরুরি।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কালচারাল একাডেমি বিরিশিরির পরিচালক পরাগ রিছিল বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর সংস্কৃতি আলাদা হলেও, তাদের মধ্যে রয়েছে ঐক্যের এক অদৃশ্য বন্ধন। রাজশাহী ও বিরিশিরির শিল্পীদের এই সাংস্কৃতিক বিনিময় পারস্পরিক বোঝাপড়া ও বন্ধুত্ব আরও দৃঢ় করবে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের সংস্কৃতির মূল শেকড় গ্রামীণ জীবন ও লোকজ ঐতিহ্যে নিহিত। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর সংস্কৃতি সেই ঐতিহ্যেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। তরুণ প্রজন্মকে নিজেদের শেকড়ের সঙ্গে যুক্ত রাখতে এ ধরনের কর্মসূচি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃতি সংরক্ষণ ও প্রচার বাংলাদেশের সামাজিক সম্প্রীতি ও বৈচিত্র্যের প্রতীক। জাতীয় উন্নয়নের মূলধারায় তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি শিক্ষা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নও জরুরি।