
স্টাফ রিপোর্টার : একসময় রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে এক ফসলি ধান ছাড়া আর তেমন কোনো ফসলই চাষাবাদ হতোনা। তবে সময়ের ব্যবধানে সেই বরেন্দ্রের মাটি এখন হয়ে উঠেছে খাঁটি সোনা। এ মাটিতে এখন ফলছে সব ধরনের ফসল-ফল ফলাদি।রাজশাহীর বরেন্দ্র শুধু আমের জন্য সেরা নয়, এখন সব ধরনের ফলের পাশাপাশি চায়না জাতের কমলালেবুর উৎপাদন তো তাক লাগানোর মত। রাজশাহীর বরেন্দ্রভূমি গোদাগাড়ীর গোগ্রামে কমলা লেবুর চাষে রীতিমত বিপ্লব ঘটেছে।
ষাটবিঘা জমি লিজ নিয়ে চার বছর আগে গড়ে তোলা উক্ত্যোক্তা রফিকুল ইলমামের চাইনা জাতের কমলালেবুর বাগানে এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। বাগানে এখন শোভা পাচ্ছে পাকা রসে টসটসে কমলা। গাছে গাছে নয়, যেন কমলা ধরেছে পাতায় পাতায়। কমলার ভারে নুইয়ে পড়েছে গাছগুলো। যেন বাগানজুড়ে কমলার হাসি। এক অপরূপ সাজে সেজেছে গোগ্রামের পুরো কমলার বাগান।
বরেন্দ্রের এঁটেল মাটিতে কীভাবে সুমিষ্ট কমলা ফলাতে হয় তার নজির সৃষ্টি করেছেন রফিকুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন উদ্যোগি কৃষক। এক একটি কমলা বাগানে এখন বছর ব্যাপী অন্তত ৩০/৪০ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। মাঠ থেকে পাইকারী কমলা বিক্রি করে উপার্জন করছেন নগর অর্থ। আগামীতে আরো ষাট বিঘা জমিতে কমলা বাগান তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
রাজশাহীর গোদাগাড়ীর গোগ্রামের কমলা বাগানে কর্মরতরা জানান, কমলা বিক্রি করতে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। বাগানে বসেই কমলা বিক্রি করেন তারা। রাজশাহীর বিশাল এ কমলা বাগান দেখাশোনা করেন স্থানীয় যুবক কাউসার হোসেন। তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরেই কমলা চাষ হচ্ছে। শুরুতে পরীক্ষামূলকভাবে চাষাবাদ শুরু হলেও এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে সুমিস্ট কমলা লেবুর।
চাষাবাদের সঙ্গে যুক্ত স্থানীয় কৃষকরা জানান, এ বাগানের কমলা সম্পূর্ণ বিষমুক্ত ও সুমিষ্ট। কোনো প্রকার রাসায়নিকের ব্যবহার ছাড়ায় কমলালেবু উৎপাদন হচ্ছে। এখান থেকেই বিক্রি হয়ে যায় সুমিস্ট কমলা লেবু।
উদ্যেক্তরা বলছেন, গাছ যত বড় হবে, ফলনও তত বাড়বে, সুমিষ্ট হবে। ভালো ও সঠিক পরিচর্যা হলে ভালো ফলন আসবে। রাজশাাহীতে তাই ধীরে ধীরে কমলা চাষ বাড়ছে। বাড়ছে কমলা চাষের জনপ্রিয়তা। অনেক জাতের কমলালেবু রয়েছে এর মধ্যে চায়না, অস্ট্রেলিয়া ও ভিয়েতনামের কমলা বেশি হচ্ছে এখানে।
কৃষকরা বলছেন, বিদেশ থেকে আমদানি করা কমলার চেয়ে বরেন্দ্র অঞ্চলের উৎপাদিত কমলার স্বাদ কোনো অংশে কম নয়। প্রক্রিয়াজাতকরণ ও দীর্ঘ সংরক্ষণের জন্য বিদেশি কমলার পুষ্টিমান ও স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু বাগানের কমলায় সেই আশঙ্কা নেই।
রাজশাহী কৃষিবিভাগ জানিয়েছে, ২০১৪ সাল থেকে রাজশাহী অঞ্চলে কমলার চাষ হচ্ছে। প্রতিবিঘা জমিতে উৎপাদন হচ্ছে ৩ টনের বেশী কমলা। চায়না, অস্ট্রেলিয়া ও ভিয়েতনামের কমলার চাষ বেশী হচ্ছে বরেন্দ্র অঞ্চরে। আর স্বল্প খরচে ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান কমলা চাষিরা।
রাজশাহীর কৃষি বিভাগ জানায়, পরীক্ষামুলক চাষে সফলতা আসায় এখন বাণিজ্যিকভাবে হচ্ছে কমলা চাষ। এ বছর রাজশাহী জেলায় ১৯ দশমিক ৮০ হেক্টর জমিতে কমলা চাষ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩১১ মেট্রিক টন।