স্টাফ রিপোর্টার : প্রেমিকার প্রতিবেশীদের হামলায় ১৩ দিন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিউতে অচেতন থাকার পর শনিবার শিহাব আলী (১৭) নামের এক কিশোরের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শিহাব রাজশাহীর বসন্তপুর গ্রামের মুদি ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান রিপনের ছেলে। চলতি বছর এসএসসি পাস করেছিল সে। তার এমন মৃত্যুতে পুরো এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
রবিবার দুপুরে হাসপাতাল থেকে শিহাবের লাশ বাড়িতে পৌঁছালে চারপাশে কান্নার রোল পড়ে যায়। বাবা রিপন ছেলের মুখে হাত রেখে বারবার বলছিলেন, ‘তুই একবার চোখ খুলে তাকাস বাপ, একবার।’ এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্যে কেঁদেছে গোটা গ্রাম। ছেলের মৃত্যুর পর বাবা রিপন এখন ন্যায়বিচার চান। বলেন, আমার ছেলেকে যারা মেরেছে, তাদের নাম জানিয়ে মামলা করেছি। কিন্তু কেউ গ্রেফতার হয় নি। তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
জানা গেছে, শিহাবের ওপর হামলার পর গত ২৪ অক্টোবর রাতে রিপন বান্দুড়িয়া এলাকার রতন আলী, কানন, সুজন আলী, ইয়ার উদ্দীন, শরীফ, রাব্বি, হালিম ও কলিমসহ নয়জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও কয়েকজনকে অজ্ঞাত আসামি করে গোদাগাড়ী থানায় মামলা করেন। কিন্তু মামলা হওয়ার নয়দিন পেরিয়ে গেলেও কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। শিহাবের মৃত্যুর পর ওই মামলাটিই হত্যা মামলায় রূপান্তর হয়েছে।
নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, আসামিদের অবস্থান জানানো হলেও পুলিশ গুরুত্ব দেননি। শিহাবের খালাত ভাই মাসুদ রানা বলেন, কম বয়সের ছেলেটাকে নির্মমভাবে মারা হলো। আমরা এখন চাই ওর হত্যাকারীরা যেন শাস্তি পায়। জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই আসামিরা পলাতক। বাংলাদেশের যেখানেই তারা লুকাক না কেন, শিগগিরই তাদের ধরা হবে। রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল আলিম বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোনো গাফিলতি পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, ১৭ বছর বয়সি শিহাব ভালোবেসেছিল একই এলাকার এক কিশোরীকে। মনের টানেই গত ২০ অক্টোবর সন্ধ্যায় প্রথমবারের মতো দেখা করতে গিয়েছিল তার সঙ্গে। কয়েক সেকেন্ডের দৃষ্টি বিনিময়, কিছু কথা- এই ক্ষণিক মুহূর্তটাই ছিল কিশোরটির জীবনের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। কিন্তু সেই মুহূর্তের পরই ওলটপালট হয়ে যায় সবকিছু।
প্রেমিকার প্রতিবেশীরা লাঠি হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে কিশোর শিহাবের ওপর। বেধড়ক পিটুনিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সে। খবর পেয়ে স্বজনরা তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে আইসিইউতে টানা ১৩ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে শনিবার নিভে যায় কিশোর শিহাবের জীবন প্রদীপ।